সজনে ডাঁটা দিয়ে শুক্তো। সজনের কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করলাম।
যেসব রোগ সারাবে সজনে ডাঁটা :-
সজনে একটি অতিপরিচিত পুষ্টি ও খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ সবজি। এতে প্রায় ৩০০ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।শরীরের প্রয়োজনীয় সব ভিটামিনের সাথে অত্যাবশ্যকীয় সব এমিনো এসিড সজনে পাতায় আছে বলে সজনেকে পুষ্টির ডিনামাইট বলা হয়। পুষ্টি ঘাটতি পূরণে সজনে ডাটার পাশাপাশি সজনে পাতাও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
এর সঙ্গে অতুলনীয় পুষ্টি গুনে ভরা এই সজনের ডাঁটা। শুধু ডাঁটা নয়, এর পাতা, ফুলও খাওয়া যায়। সবজির পাশাপাশি এটি ঔষধি গুণের জন্যও বেশ জনপ্রিয়। এক নজরে দেখে নিন সজনে ডাঁটার নানান গুণাগুণ।
সজনের মধ্যে কিছু পুষ্টিগুণ :-
১০০ গ্রাম সজনে প্রোটিন পাওয়া যায় ২.৫ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩.৭ গ্রাম, ক্যালরি ২৬, ভিটামিন বি ৪২৩ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ১২০ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মি. গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৪ মি. গ্রাম, ফসফরাস ২৫৯ মি. গ্রাম, পটাসিয়াম ১১৬ মি. গ্রাম. আয়রন ৫.৩ মি. গ্রাম এবং সালফার ৩৭ মি. গ্রাম। সজনে ডাটায় রয়েছে অ্যামাইনো এসিড। সজনেকে খনিজ পদার্থের শক্তিঘর বলা হয়। দুধে এবং সজনা ডাটায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ যথাক্রমে ১২০ মি. গ্রাম এবং ৪৪০ মি. গ্রাম, কলায় পটাসিয়াম পাওয়া যায় ৮৮ মি. গ্রাম, তার তুলনায় সজনে পাবেন ২৫৯ মি. গ্রাম। ব্লাড সুগার রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখে সজনের পুষ্টি। কারণ এতে আছে ডায়াটিরি ফাইবার। কমলায় যেখানে ভিটামিন সি পাবেন ৩০ মি. গ্রাম, সেখানে সজনায় পাবেন ২২০ মি. গ্রাম। এমন তারতম্য রয়েছে আরও অনেক। এ ছাড়া অপুষ্টির অভাব থেকে দূরে থাকতে ভিটামিন সমৃদ্ধ সজনে পাতা খেতে পারবেন সঙ্গে ডাঁটা ও খেতে পারেন।
চলুন তবে দেখে নেয়া যাক সজনের ডাঁটার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে:-
• উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:- উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী সজনে ডাঁটা খাওয়া। দেহের কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এটি। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় সজনের পাতাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সজনের পাতার রস প্রতিদিন নিয়ম করে ৪-৬ চা চামচ খেলে উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
• ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে:- সজনে মানুষের শরীরে চিনির সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে । তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সজনে খুবই উপকারী।
• হাড় শক্ত ও মজবুত করে:- সজনে ডাটায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন । তাই এটি সুস্থ এবং শক্তিশালী হাড়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী এছাড়াও আমাদের শরীরের রক্ত বিশুদ্ধ করতেও সজনের কোন জুড়ি নেই।
• পেটের সমস্যা সমাধান করে:- অনেক আগে থেকেই সজনে হজমের সহায়ক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পেটে গ্যাস হলে, বদহজম হলে এবং পেটে ব্যথা হলে সজনের তৈরি তরকারীর ঝোল খেয়ে নিন। দেখবেন পেটের গোলমাল অনেক খানি উপশম হয়ে গিয়েছে।
• শ্বাসকষ্ট রোধ করে:- সজনে খুবই উপকারী শ্বাসকষ্ট রোধ করতে। শ্বাসকষ্ট সারায় এর ডাঁটা ও পাতা খেলে। সজনে ডাঁটায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে, ফলে অ্যালার্জির কারণে যে শ্বাসকষ্ট হয় তা দূর করতে সাহায্য করে।
• বসন্ত রোগ প্রতিরোধ করে:- বসন্ত প্রতিরোধে সজনে ডাটা তরকারি বা ডাল রান্না করে খেলে জল বসন্ত ও গুটি বসন্তে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়।
• কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:- সজনে ডাঁটায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণের আশঁ যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিন নিয়ম করে সজনে ডাঁটা দিয়ে যে কোন তরকারি রান্না করে খেতে পারেন। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধান হবে।
• দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে:- সজনে ডাঁটায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এবং চোখের অসুখ সারাতে ভূমিকা রাখে।
সজনের কিছু অপকারিতা :-
সজনের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতা রয়েছে। যে কোন জিনিস যদি পরিমাণ মতো খাওয়া যায় তাহলে শরীরে উপকার পাওয়া যায়, আর তেমনই যদি পরিমাণ থেকে অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে শরীরে ক্ষতি হয়। তাই এক কথায় বলা যায় যে,যে কোন জিনিস পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত,যা শরীরের পক্ষে ভালো বা লাভদায়ক।
ডিসক্লেইমার :- ওপরের উল্লেখিত দাবি, পদ্ধতিতে পরামর্শ স্বরূপ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি আর ডায়েট ফলো করার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ অথবা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন অথবা কথা বলুন, সেই নিয়ম মতো মেনে চলুন।