মটর ডালের শুক্তো। বিভিন্ন ডালের নানান উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করলাম।Motor Dal Er Shukto।

 

মটর ডালের শুক্তো। বিভিন্ন ডালের নানান উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করলাম।



মটর ডালের শুক্তো




একটি ছোট্ট টিপস :-


ভাতের পাশে এক বাটি ডাল আর ভাজা না হলে নিশ্চয়ই আপনার খাওয়া হয় না! কি ঠিক ধরেছিতো,ডাল তো খান দিব্যি, রোজ সকালে গিন্নির হেঁশেলে গিয়ে কি ডাল রান্না হবে, তার তত্ত্ব-তালাসও করেন। কিন্তু জানেন কি ডালের উপকারিতা? আমরা সবাই কম-বেশি জানি যে ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।

যারা নিরামিশ খান, তাঁদের বেশী করে ডাল খেতে বলা হয়। আমিষ প্রোটিনের ঘাটতি ডাল অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ডালে যে নানারকম ভিটামিন, ফসফরাস ইত্যাদি মিনারেলও থাকে, তা তো জানেন না? চাপ নেই, আজকের লেখা পড়ুন, আর জেনে নিন বিভিন্ন ডালের বিভিন্ন উপকারিতা
!





সব ধরণের ডাল




বিভিন্ন ডালের নানান উপকারিতা জেনে রাখুন ডাল খাওয়ার আগে :-

মুসুর ডাল :-

মুসুর ডাল নিশ্চয়ই আপনাদের পছন্দের তালিকায় সবথেকে ওপরেই থাকবে। ডালের মধ্যে মুসুর ডালেই সবথেকে বেশী প্রোটিন থাকে। তাছাড়া মুসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও থাকে। ১০০ গ্রাম রান্না করা মুসুর ডালে প্রায় ১১৬ ক্যালোরি থাকে। তাছাড়া ওতে ১১ শতাংশ ডায়েটারি ফাইবার, ৬৩ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ২৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে।

তাছাড়া মুসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে প্যান্টোথ্যানিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি , ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্ক থাকে। আর বাঙালী মাত্রেই তো জানেন পেটের সমস্যা অনিবার্য! পেট খারাপ, অম্বল, হজমের গোলমাল নিশ্চয়ই আপনারও লেগেই থাকে। তো এবার থেকে মুসুর ডাল খান। দেখবেন হজমের গোলমাল, পেটের সমস্যার একদম মুশকিল আসান হয়ে যাবে।

মুসুর ডালের স্যুপের রোগ দূর করার যে অদ্ভুত ক্ষমতা আছে সে কথা তো ডাক্তাররাও বলে থাকেন। গলা, অন্ত্রের বিভিন্ন রোগকে টাটা যদি বলতে চান, তাহলে মুসুর ডালের পাতলা স্যুপ বানিয়ে খান। আর আপনার যদি হিমোগ্লোবিন কম থাকে? তাহলেও আপনার সে রোগেরও দাওয়াইও কিন্তু হতে পারে মুসুর ডাল।


মুগের ডাল :-
মাছের মাথা দিয়ে সোনা মুগের ডাল! আহ! ভাবলেও তো জিভে জল আসে। কিন্তু মুগ ডালের হরেক গুণাগুণ তো জানেন না। মুগ ডাল আমাদের পেটের পক্ষে হজম করা খুবই সোজা। তাই বিভিন্ন রোগে রোগীকে মুগ ডালের খিচুড়ি খাবার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও মুগের ডাল খাওয়া খুবই উপকারী। কারণ মুগের ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন আর ফাইবার থাকে। আর আপনার শরীরে যদি অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকে? আজ্ঞে হ্যাঁ। তাহলেও মুগ ডাল কিন্তু সেটা কমাতেও আপনাকে সাহায্য করবে


অড়হর ডাল বা তুর ডাল :-
পশ্চিমবঙ্গের বাইরে আমাদের অতি পরিচিত অড়হর ডালকে কিন্তু তুর ডাল বলেই ডাকা হয়। অড়হর ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন তো থাকেই। সেইসাথে থাকে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড। যেমন মিথিওনিন, লাইসিন, ট্রিপটোফ্যান ইত্যাদি। তাছাড়া ভিটামিন , ভিটামিন বি, পটাসিয়াম, সোডিয়ামও থাকে।

অড়হর ডাল খাওয়া উপকারি তো বটেই। কিন্তু জানেন কি অড়হর ডালের পাতা নিয়ে আপনি যদি আপনার কোনো কাটা বা ক্ষতের জায়গায় লাগান, তাহলে ঘা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। আর হোলির দিন ভাঙ খেয়ে টঙ হয়ে তো বাড়ি ফিরলেন। কিন্তু নেশা কাটাবেন কি করে? কিছুই না। কাঁচা অড়হর ডাল ভালো করে বেটে জলে গুলে খেয়ে নিন। নেশা এক মুহূর্তে ভ্যানিশ হয়ে যাবে!



ছোলার ডাল :-
লুচি আর ছোলার ডাল মানেই তো বাঙালীর স্বপ্নের কম্বিনেশন। ছোলার ডাল লুচি দিয়ে তো খান, কিন্তু জানেন কি ছোলার ডালের চমৎকার? ছোলার ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ডায়েটারি ফাইবার তো থাকেই, তাছাড়া ফোলেট, আয়রন, ফসফরাসও থাকে।

ডায়াবেটিসের রোগীদের যদি ছোলার ডাল খাওয়ানো যায়, তাহলে ফল মেলে। আর ছোলার ডালে কোলেস্টেরল কম পাওয়া যায়, ফলে কোলেস্টেরল কম করতে হলে ছোলার ডাল বেশী করে খান। আর অ্যানিমিয়ার ধাত থাকলেও ছোলার ডাল খান। দেখবেন সুস্থ থাকছেন।


বিউলির ডাল :-
আলু পোস্ত দিয়ে বিউলির ডাল। কি ভাবলেই জিভে জল আসছে তো? আপনার জিভে বিউলির ডালের নাম শুনলেই এবার টসটস করে জল গড়াবে, যদি শোনেন বিউলির ডালের উপকারিতা।

বিউলির ডালে প্রোটিন তো থাকেই, তাছাড়া পটাসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি মিনারেলস আর থিয়ামিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, নিয়াসিনও প্রচুর পরিমাণে থাকে। আপনার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কম করতেও সাহায্য করে তাই বিউলির ডাল ভূমিকা বিশাল।


মটর ডাল :- মটর ডাল খাওয়ার কার্যকারিতা অপরিসীম।আস্ত মটরের ঘুগনি বাঙালিদের খাওয়ারের মধ্যে খুবই প্রিয়।আর অতিথিদের মন ভরাতে মটর ডালের ঘুগনি অতি পরিচিত। মটর সেদ্ধ করে তেঁতুলের চাটনি দই সহযোগে বানানো হয় চটপটা বা চাট। মটর ডালের ধোঁকা খেতে অনেকেই পচ্ছন্দ করে থাকে। মটর ডাল ভাতে, মটর ডালের বড়া,মুলো দিয়ে মটর ডাল, ভাতের সঙ্গে ঘন মটর ডাল সবাই অনেক তৃপ্তি সহকারে খেতে পচ্ছন্দ করে।

আর বাঙালিদের মধ্যে যদি টক রান্না করতে মটর ডালের বড়ি প্রয়োজন হয়। আয়ুর্বেদের মতে: মটর ডাল হলো লঘু, শরীর শীতল করতে অনেক খানি সাহায্য করে।আরো কফ দূর করতে সাহায্য করে। শরীর সুস্থ্য ভালো রাখতে মটর ডালের কার্যকারিতা উপকারিতা অনেক যেমন :

. মটর ডালের ভেজানো জল খেলে বমি থামাতে বা বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

. মটর ডাল তেঁতুল, লবণ দুধের সাথে বেটে নিয়ে প্রলেপ আকারে দিতে পারলে ফোঁড়া তাড়াতাড়ি ফেটে যেতে সাহায্য করে।

. মটর ডালে প্রচুর পরিমাণে খনিজ,সুপাচ্য প্রোটিন বেশি মাত্রায় রয়েছে।

. মটর ডালে কার্বোহাইড্রেট ভিটামিন '' এবং ভিটামিন 'সি ' পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।

. মটর ডালে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।



ডাল খাওয়ার ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা কি কি :-

ডাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু ডাল খাওয়ার যে কিছু ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানি না।ডাল খাওয়ার ক্ষতিকর দিকের মধ্যে অন্যতম হলো যাদের শরীর আগে থেকেই মোটা বা অতিরিক্ত মেদ তাদের জন্য ডাল না খাওয়াই উচিত। কেননা নিয়মিত ডাল খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ডাল না খাওয়াই উচিত। ডালের মধ্যে খেসারির ডাল বেশি পরিমাণে খেলে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি দৃষ্টিশক্তি হারানোর ভয় থাকে।এই ডাল খেতে ভালো লাগলেও চোখের জন্য ক্ষতিকর হত্তয়ায় বেশি না খাওয়াই উত্তম। একথায় বলা চলে যে যে কোন খাবার পরিমাণমতো খেলে শরীরের পক্ষে লাভদায়ক।আর পরিমাণের চেয়ে বেশি খেলে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই যে কোন খাবার পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আজকের মটর ডালের শুক্তো রেসিপিটি দেখে নেওয়া যাক।





ডিসক্লেইমার :- ওপরের উল্লেখিত দাবি, পদ্ধতিতে পরামর্শ স্বরূপ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি আর ডায়েট ফলো করার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ অথবা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন অথবা কথা বলুন, সেই নিয়ম মতো মেনে চলুন।




যা যা প্রয়োজন অর্থাৎ উপকরণ :-

. মটর ডাল ২৫০ গ্ৰাম

. হলুদ চামচ

. হিংচে শাক আঁটি

. কাঁচা লঙ্কা থেকে টি

. রাঁধুনি পাঁচফোড়ন গুঁড়ো চামচ

. ঘি চামচ

. কাঁচা দুধ সিকি কাপ

. চিনি প্রয়োজনমতো

. নুন পরিমাণমতো




মটর ডালের শুক্তো




কি ভাবে রান্না করবেন অর্থাৎ প্রনালীঃ -

প্রথম ধাপ :- প্রথমে হিংচে শাক ভালো করে বেছে নিন। তারপর মটর ডালে নুন, হলুদ কাঁচা লঙ্কা চিরে দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ হলে ভালো করে হাতায় নেড়ে ডাল ঘেঁটে নিন। এবারে ডালে শাক দিয়ে ঢাকা দিয়ে দেবেন।এই সময় সামান্য চিনি শাকে দেবেন। এরপর ডাল শাকের সঙ্গে মিশে গেলে নামিয়ে নিন। এবারে একটি কড়াই নিন, সেই কড়াইতে ঘি দিয়ে একটু গরম হলে তাতে রাঁধুনি পাঁচফোড়ন গুঁড়ো শুকনো লঙ্কা দিয়ে পুরো ডাল সাতলে নিন। তারপর নামাবার সময় কাঁচা দুধ দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।ব্যস এই ভাবেই বাড়িতে তৈরি করে ফেলুন মটর ডালের শুক্তো। 
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.