আজকে দেখাবো একবারে বাঙালিয়াআনার 'দই ইলিশ' রেসিপি।
একটি ছোট্ট টিপস :-
বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানে ভেষজ ঔষধ -
এই পৃথিবীতে মানুষ খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল।এই
উদ্ভিদের মধ্যে আমাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ঔষধ লুকিয়ে রয়েছে।যা আমাদের জানার
প্রয়োজন। তাহলে আসুন জেনে নেই কিছু ভেষজ উপাদানের কথা যা আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে
সাহায্য করে।
• আমলকী - আমলকীর ভেষজ গুণ রয়েছে অনেক।এর ফল ও পাতা
দুটোই ওষুধ রূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন 'সি' থাকে। যেটি আমাদের শরীরের
পক্ষে লাভদায়ক। অনেক পুষ্টিবিদ বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে
৩ গুণ বেশি ভিটামিন 'সি' রয়েছে। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্ৰাম ভিটামিন
'সি' প্রয়োজন।দিনে দুটো আমলকী খেলে এই পরিমাণ ভিটামিন 'সি' পাওয়া যায়।
এর ঔষধিগুণ :-
১. আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে।
২. বমি বন্ধে ভালো কাজ করে।
৩. দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর
নির্যাস উপকারী।
৪. এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক। ভিটামিন সি
সমৃদ্ধ আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন অসুখ সারানো
ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতে ও আমলকী দারুন সাহায্য করে।
৫. আমলকীর গুনাগুনের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধ ও এখন আমলকীর
নির্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।
• আমলকী খাওয়ার উপকারিতা :-
১. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকীতে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
রয়েছে,যা ফ্রি যার্ডিকালস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বয়স্ক হয়ে যাওয়া ও সেল ডিজেনারেশনের
অন্যতম কারণ এই ফ্রি যার্ডিকালস।
২. আমলকী ত্বক, চুল ও চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে
রয়েছে ফাইটো কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িত ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৩. আমলকী হজমে ও সাহায্য করে ও স্টমাক অ্যাসিডে ব্যালেন্স
বজায় রাখে।
৪. আমলকী লিভার ভালো রাখে, ব্রেনের কার্যকলাপে সাহায্য
করে ফলে মেন্টাল ফাংশনিং ভালো হয়।
৫. আমলকী বস্নাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস
প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেল ও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
৬. হার্ট সুস্থ রাখে, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে তোলে। শরীর
ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে,মাসল টোন মজবুত করে।
৭. লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে, দাঁত ও নখ
ভালো রাখে।
৮. শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। ব্রঙ্কাইটিস
ও এ্যাজমার জন্য আমলকীর জুস উপকারী।
৯. পেটের জ্বালা জ্বালাভাব কম রাখে। লিভারের কার্যকলাপে
সাহায্য করে,পাইলস সমস্যা কমায় ইত্যাদি।
• বাসক :- বাসক একটি ভারত উপমহাদেশীয় ভেষজ উদ্ভিদ। আর্দ্র,সমতল
ভূমিতে এটি বেশি জন্মায়। লোকালয়ের কাছেই জন্মায় বেশি।হালকা হলুদ রঙের ডালপালায়ক্ত
১ থেকে ২ মি. উঁচু গাছ, ঋতুভেদে সর্বদাই প্রায় সবুজ থাকে।
• বাসকের প্রয়োগ :-
১. বাসক পাতার রস স্নানের আধ ঘন্টা আগে মাথায় কয়েকদিন
মাখলে উকুন মরে যায়।আমবাত ও ব্রণশোথে (ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থা)বাসক পাতা বেটে প্রলেপ
দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
২. প্রস্রাবে জ্বালা ও যন্ত্রণা থাকলে বাসকের ফুল বেটে
২ থেকে ৩ চামচ মিছরি ১ থেকে ২ চামচ সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৩. যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্য শ্বাসকষ্ট হলে
বা কাশি হলে বাসক পাতার রস ১ থেকে ২ চামচ এবং কন্টিকারীরস ১ থেকে ২ চামচ,১ চামচ মধুসহ
খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
৪. বাসক পাতার রস ১ থেকে ২ চামচ হাফ থেকে এক চামচ মধুসহ
খেলে শিশুর সর্দি কাশি উপকার পাওয়া যায়।
৫. জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫ থেকে ১০
গ্ৰাম ভালো করে ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলি লিটার জলে ফোটাতে হবে।২৫ মিলি লিটার থাকতে
নামিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে জ্বর এবং কাশি দুইটোই চলে যায়।
৬. বাসকের কচিপাতা ১০ থেকে ১২ টি এক টুকরো হলুদ একসঙ্গে
বেটে দাদ বা চুলকানিতে লাগালে কয়েকদিনের মধ্যে তা সেরে যায়।
• বাসকের কয়েকটি ভেষজ দাওয়াই :-
১. যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তারা বাসক পাতার রস গায়ে
লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে।
২. বাসক পাতার রস ও শঙ্খচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার
করলে রং ফরসা হয়।
৩. শিশুর পেটে কৃমি থাকলে বাসকের ছালের ক্কাথ খাওয়ালে
এর উগ্ৰ তিক্ত স্বাদের কারণে কৃমি বের হয়ে যায়।
৪. এক কলসি জলে তিন থেকে চারটি বাসক পাতা ফেলে তিন থেকে
চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই জল বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্যবহার করতে পারেন।
৫. শরীরে দাগ থাকলে বাসক পাতার রস লাগালে ভালো হয়ে যায়।
• তেলাকুচা :- তেলাকুচা এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। ভারতে
স্থানীয় ভাষায় একে তেলা,কুচিলা,তেলাকচু,তেলাহচি,তেলাচোরা কেলাকচু, তেলাকুচা বিম্বী,
তেলাকুচা ইত্যাদি নামে ডাকা হয়ে থাকে। অনেক অঞ্চলে এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। গাছটির
ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা,লতা,মূল ও ফল ব্যবহৃত হয়।
• তেলাকুচার ঔষধি গুনাগুণ :- তেলাকুচা ফলে আছে 'মাস্ট
সেল স্টেবিলাইজিং', 'এনাফাইলেকটিক রোধী' এবং 'এন্টিহিস্টামিন' জাতীয় উপাদান। কবিরাজি
ভেষজ চিকিৎসায় তেলাকুচা বেশ কিছু রোগে ব্যবহৃত হয়, যেমন - জ্বর,শোথ (edema), হাঁপানি,
জন্ডিস ইত্যাদি।
• অর্জুন :- ভেষজ শাত্রে ঔষধি গাছ হিসেবে অর্জুনের ব্যবহার
অগনিত।বলা হয়ে থাকে, বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ থাকা আর একজন ডাক্তার থাকা একই কথা।এর
ঔষধিগুণ মানব সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সুপ্রাচীন কাল থেকেই।আর এই গাছের গুনাবলীর
সম্পর্কে আশা করি সকলেই কমবেশি জানেন।
অর্জুন গাছের ব্যবহার :-
১. অর্জুন গাছের ছালে essential oil রয়েছে তাই অর্জুন
খাদ্যা হজম ক্ষমতা বাড়ায়। খাদ্যাতন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
২. এটি সংকোচ ও জ্বর নিবারক হিসাবে ও কাজ করে। এছাড়া
অর্জুনে saponin রয়েছে, এটি যৌন উদ্দীপনা বাড়ায়।তাই চর্ম ও যৌনরোগে অর্জুন ব্যবহৃত
হয়। আর ও যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে ও অর্জুনের ছালের রস ব্যবহার হয়।
৩. অর্জুনের ছালে ট্যানিন রয়েছে,এ টানিন মুখ, জিহ্বা
ও মাড়ীর প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। এটি মাড়ীর রক্তপাত বন্ধ করে এবং শরীরে ক্ষত,খোস
পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছাল বেটে লাগালে সেরে যায়। অর্জুনের ছাল হাঁপানি, আমাশয়,
ঋতুস্রাব জনিত সমস্যায়, ব্যথায়, ইত্যাদি চিকিৎসায় ও উপকারী।
৪. অর্জুনের ছাল বেটে খেলে হৃৎপিণ্ডের পেশি শক্তিশালী
হয়, হৃৎপিণ্ডের ক্ষমতা বাড়ে। এটি রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ফলত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
থাকে। অর্জুন গাছের ব্যবহার যতটা বলা যায় ততটাই কম হবে বলে মনে হয়।
• অশ্বগন্ধা :- অশ্বগন্ধা আমাদের দেশের ভেষজ উদ্ভিদের
মধ্যে অন্যতম।এই গাছের গন্ধ ঘোড়া বা অশ্ব এর মতো বলেই সংস্কৃতে একে অশ্বগন্ধা বলে
থাকে।বাংলায় ও আমরা অশ্বগন্ধা ই বলে থাকি। শক্তিবর্ধক হিসেবে এবং এ্যাফ্রোডেসিয়াক
হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলেই ইংরেজিতে একে Indian Ginseng বলে।
Solanaceae ফ্যামিলির গাছ অশ্বগন্ধার বৈঙ্গানিক নাম
Withania somnifera (L) Dunal. Withanine নামক রাসায়নিক উপাদান এই গাছ থেকে আলাদা
করার কারণে এই গাছের নামে Withania নামকরণ করা হয়েছে।
আর somnifera এসেছে somnifer থেকে যার অর্থ নিদ্রা আনয়নকারী।
মূল এবং পাতা স্নায়ুর বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়।এ গাছ ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা,
পাকিস্তান ইত্যাদি জায়গায় দেখা যায়। নিদ্রা আনয়নকারী ঔষধ হিসেবে প্রাচীন মিশরে
ও মেসোপটেমিয়ায় এর ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
• কালমেঘ :- কালমেঘ একটি ভেষজ উদ্ভিদ।১ সে.মি. লম্বা এই ফুলের রং
গোলাপী।দেড় থেকে দুই সে.মি. লম্বা ফল অনেকটা চিলগোজার মতন দেখতে।শিকড় ব্যতীত কালমেঘ
গাছটির সব অংশই ঔষুধের কাজে লাগে। কালমেঘ অত্যন্ত তেতো এবং পুষ্টিকর।
• কালমেঘের ব্যবহার :-
১. এই গাছের পাতা সেদ্ধ করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে
ঘা ও পাঁচড়া জাতীয় রোগ দূর হয় বলে আদিবাসীদের বিশ্বাস।
২. কালমেঘ গাছের পাতার রস জ্বর, কৃমি, অজীর্ণ, লিভার
প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
৩. এই গাছের রস রক্ত পরিষ্কারক, পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তিবর্ধক
ও রেচক হিসেবে ও কাজ করে।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্যের হলে এই পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে
খাওয়ানো হয়।এই গাছের রস কোষ্ঠকাঠিন্যের ও লিভার রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
৫. জীবাণুরোধে কালমেঘ বহু উপকারি এবং বহু কার্যকরী।
৬. জ্বর, কৃমি, আমাশয়, সাধারণ শারীরিক দূর্বলতা এবং
বায়ু আধিক্যে কালমেঘ অত্যন্ত উপকারী। এককথায় মানব দেহের রোগপ্রতিরোধী শক্তি বৃদ্ধি
করে।
ওপরের উল্লেখিত দাবিগুলি সব ঘরোয়া ও ভেষজ ঔষধের চিকিৎসা
পদ্ধতি, আপনাদের পচ্ছন্দ হলে ট্রাই করে দেখতে পারেন। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
উচিত প্রথম। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আজকের 'দই ইলিশে' রেসিপিটি দেখে নেওয়া
যাক। বন্ধুরা কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
ডিসক্লেইমার :- ওপরের উল্লেখিত দাবি, পদ্ধতিতে পরামর্শ
স্বরূপ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি আর ডায়েট ফলো করার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ অথবা
চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন অথবা কথা বলুন, সেই নিয়ম মতো মেনে চলুন।
যা যা প্রয়োজন অর্থাৎ উপকরণ :-
১. ইলিশ মাছ ৫০০ গ্ৰাম (টুকরো করা)
২. টক দই ১০০ গ্ৰাম
৩. সরষের তেল ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ
৪. কাঁচা লঙ্কা ৪ থেকে ৫ টি
৫. সরষে ১ চা -চামচ (দুটো গোটা কাঁচালঙ্কা দিয়ে বাটা)
৬. পাঁচফোড়ন সামান্য পরিমাণে
৭. শুকনো লঙ্কা বাটা এক তৃতীয়াংশ চা -চামচ
৮. হলুদ আন্দাজমতো
৯. নুন পরিমাণমতো
কি ভাবে রান্না করবেন অর্থাৎ প্রনালীঃ -
প্রথম ধাপ :- প্রথমে ইলিশ মাছ গুলো একবার ভালো করে ধুয়ে
রাখুন। এরপর দই ফেটিয়ে ও সামান্য নুন ও হলুদ মাছে মাখিয়ে দশ মিনিট ধরে ভেজান। এবারে
একটি কড়াই নিন, সেই কড়াইতে পাঁচ টেবিল চামচ সরষের তেল গরম করে তাতে পাঁচফোড়ন ও তিন
থেকে চারটে কাঁচালঙ্কা চিরে ফোড়ন দিন।
এবারে ইলিশ মাছ গুলো দই থেকে তুলে এই কড়াইয়ের গরম তেলে
দুই পিঠ সামান্য ভেজে লঙ্কা বাটা ও দই ঢেলে ফোটান। তারপর একটু ফুটে উঠলে নুন,এক চামচ
সরষে বাটা ও এক চামচ তেল দিয়ে চাপা দিন। মিনিট দুয়েক আঁচে রেখে নামিয়ে নিন।ব্যস
এই ভাবেই তৈরি করে ফেলুন বাড়িতেই এই বাঙালিয়ানার 'দই ইলিশে' রেসিপি।