হিংচে দিয়ে পেঁপের শুক্তো। পেঁপের কিছু উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করলাম।Papaya Shukto।
BengaliKitchen
জুলাই ০৭, ২০২৪
হিংচে
দিয়ে পেঁপের শুক্তো। পেঁপের কিছু উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানোর
চেষ্টা করলাম।
একটি ছোট্ট টিপস :-
গ্রাম বাংলার খুব পরিচিত এক ফল পেঁপে।
এই ফলের পুষ্টিগুণ যেমন প্রচুর, তেমনি শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ফলটি খুবই কার্যকর। হৃদযন্ত্র ভালো রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করা, হজমের সমস্যা দূর করা সহ অনেকগুলো শারীরিক
উপকারিতা করে পেঁপে। পেঁপের গুণ ও দোষগুলো কী,
সেগুলো জানি চলুন- পেঁপের যতো উপকারিতা খেতে অনেকটাই সুস্বাদু এই ফলের ১০০
গ্রামে ৩৯ ক্যালরি থাকে।
প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, আঁশ, ভিটামিন এ,বি,সি,ডি আছে পেঁপেতে।
এছাড়া পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম ও অ্যালবুমিন এনজাইম
থাকে পেঁপেতে। পেঁপে অনেক রোগ সারাতে কার্যকর, এটা শত শত বছর
ধরেই স্বীকৃত। হজমের জন্য এই ফল খুবই
উপকারি। অনেক ক্ষেত্রে পোকা মাকড়ের কামড়, অল্প পোড়ায় পরিত্রাণ পেতে পেঁপের জুস লাগালে উপকার পাওয়া যায়। বিশ্বজুড়ে কসমেটিকস তৈরিতেও পেঁপে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ফল লিভার
ও ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে, অন্ত্রের ক্ষতিকর উপাদান দূর করে। পেঁপে খেলে শরীর সতেজ হয় ও জীবনী
শক্তি ফিরে পাওয়া যায়। পাকস্থলীর অতিরিক্তি এসিড দূর করে, তাই যারা গ্যাস্ট্রিক ও বুক জ্বালায়
ভুগছেন, তাদের জন্য পেঁপে খুব উপকারি। বাড়ন্ত শিশুর জন্য পেঁপে একটি আদর্শ খাবার।

পেঁপের আরো উপকারিতাগুলো জানি চলুন :-
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : - জাপানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা
গেছে, পেঁপে খেলে এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, পেঁপে গাছের মূল ও ফুল কিডনি
রোগ, ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস সারায়।
• আথ্রাইটিস সারায় :- বেশ কিছু গবেষণায় জানা গেছে, কাইমোপ্যাপিন নামের এনজাইম থাকায় পেঁপে ওসটিওআথ্রাইটিস ও রিউমেটয়েড রোগ
সারায়।
• নারীদের রজঃস্রাব সমস্যায় :- যেসব নারীর অনিয়মিত রজঃস্রাব হয়, তাদের জন্য পেঁপের জুস উপকারি। এক্ষেত্রে কাঁচা বা পাকা পেঁপে
খেলেও উপকার পাওয়া যায়। যেহেতু এই ফল শরীর
উত্তপ্ত করে, তাই এটি ‘হট ফুড’ হিসেবেও
স্বীকৃত।
• কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে :- পেঁপেতে প্রচুর ভিটামিন ই, সি ও
ফলেট থাকায় মল ত্যাগে সমস্যা
বা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এই ফল। কাঁচা
পেঁপে ও তার জুস
হজমে সহায়তা করে। পেঁপেতে থাকা আঁশ বাওয়েল মুভমেন্ট স্বাভাবিক রাখে। এতে করে মল ত্যাগের সমস্যা
দূর হয়।
• বার্ধক্যে দৃষ্টিশক্তিহীনতা দূর করে : - বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা দেখা
দেয়, তা দূর করতে
নিয়মিত পেঁপে খাওয়া জরুরি। এই ফলে থাকা
বিটা ক্যারোটিন নামের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
• শরীরের যন্ত্রণা সারায় : - পেঁপেতে থাকা কাইমোপ্যাপিন ও প্যাপিন এনজাইম
শরীরের যন্ত্রণা সারাতে সাহায্য করে। শরীরের কোথাও পুড়ে গেলে পেঁপের নির্যাস ব্যবহার করে স্বস্তি পাবেন।
• ব্রণ সারায় পেঁপে : - বয়োঃসন্ধিকালে বা মুখমণ্ডলে ময়লা
জমার কারণে যে ব্রণ সৃষ্টি
হয়, তা দূর করতে
নিয়মিত পেঁপে খেলে আপনার ত্বক পরিষ্কার হবে। এছাড়া পেঁপের ভেতরের অংশসহ মাস্ক হিসেবে এটি মুখে ব্যবহার করলে ব্রণ দূর হয়।
পেঁপের অপকারিতা :-
অতিরিক্ত পেঁপে খেলে শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেঁপে কিন্তু গর্ভবতী নারীদের জন্যও ক্ষতিকর। পেঁপে খেলে গর্ভপাতের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। পেঁপের কালো বিচিগুলোও শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এগুলোতে টক্সিক এনজাইম কারপাইন থাকে, যা মস্তিষ্কে অসাড়তা
তৈরি করে কার্ডিয়াক ডিপ্রেশন বা প্যারালাইসিস তৈরি
করতে পারে। কাঁচা পেঁপের রস বিষাক্ত ও
ক্ষতিকর। কাঁচা পেঁপের নির্যাস শরীরে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এটি পান করলে বদহজম, বিষক্রিয়া ও হতে পারে।
যা যা প্রয়োজন অর্থাৎ
উপকরণ :-
১. হিংচে শাক ১ আঁটি
২. পেঁপে ছোট ১ টি
৩. কাঁচকলা ২ টি
৪. থানকুনি পাতা অল্প পরিমাণে
৫. আদা ১ টুকরো
৬. হলুদের গুঁড়ো ১ চিমটে
৭. অল্প পরিমাণে সরষে ফোড়নের জন্য
৮. চিনি প্রয়োজনমতো
৯. কাঁচা লঙ্কা পরিমাণমতো
১০. তেল পরিমাণমতো
১১. নুন পরিমাণমতো
১২. অল্প পরিমাণে দুধ ও ময়দা
কি ভাবে রান্না করবেন অর্থাৎ প্রনালীঃ -
প্রথম ধাপ :- প্রথমে হিংচে শাক ও থানকুনি পাতা
গুলো নিন, সেই গুলোকে ভালো করে ধুয়ে কেটে নিন। তারপর পেঁপে ও কাঁচকলা খোসা
ছাড়িয়ে সরু ও লম্বা করে
কাটুন। এরপর আদা মিহি করে বেটে নিন। এবারে একটি কড়াই নিন, সেই কড়াইতে তেল গরম করুন, তেল গরম হলে তাতে সরষে ফোড়ন দিয়ে আদা বাটা দিয়ে নাড়াচাড়া করে পেঁপে, কাঁচকলা,হিংচে শাক ও থানকুনি পাতা
দিয়ে দিন। এরপর তাতে এক চিমটে হলুদ
গুঁড়ো, লঙ্কা ও নুন দিয়ে
নাড়াচাড়া করে অল্প জল দিয়ে ঢাকা
দিয়ে দিন। তরকারি সেদ্ধ হলে চিনি দিন ও অল্প দুধে
ময়দা গুলে দিয়ে দিন, এবার ভালো করে নাড়াচাড়া করে নামান। এবার এটি পরিবেশন জন্য প্রস্তুত। খুব সহজেই আর কম সময়ে
হিংচে দিয়ে পেঁপের শুক্তো বাড়িতেই তৈরি করতে পারবেন। আপনারা একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন। আশা করি এই রেসিপিটি আপনাদের
ভালো লাগবে।